বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এনএএফএলডি বা নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত। গবেষণায় উঠে আসে অতি ওজন সম্পন্ন বা স্থূল ব্যক্তি , ডায়াবেটিস রোগী, মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি, বিবাহিত ব্যক্তি এবং গ্রামীণ মহিলারা অন্যদের তুলনায় এনএএফএলডি তে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি আছে।
ননঅ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD) কি?
ফ্যাটি লিভার রোগে লিভারে মাত্রাতিরিক্ত চর্বি জমা হয়। সাধারণত, প্রত্যেকের লিভারে সামান্য চর্বি থাকে। কিন্তু, ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের যকৃতের মোট আয়তনের ৫% এর বেশি চর্বি। অতীতে, যারা নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে অ্যালকোহল সেবন করতেন, কেবল মাত্র তাদের ক্ষেত্রে একচেটিয়াভাবে ফ্যাটি লিভার প্রায় দেখা যেত । কিন্তু, বর্তমানে অ্যালকোহল সেবন করেন না বা খুব কম মাত্রায় করেন এমন প্রচুর মানুষের ফ্যাটি লিভার রোগটি হচ্ছে। অর্থাৎ, এখানে অ্যালকোহল নয় বরং অন্য কারণগুলিই মূখ্য ভূমিকা পালন করে। এই জন্য এর নামকরণ করা হয়েছে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD)।
নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ এর প্রাথমিক পর্যায় হল নন-অ্যালকোহলিক হেপাটিক স্টেটোসিস অথবা আর একটু সহজভাবে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার বলা হয়। কিছু লোকের ক্ষেত্রে, রোগটি এই পর্যায়েই থেকে যায় অর্থাৎ কখনও অগ্রসর হয় না। যদিও তারা লিভারে অতিরিক্ত চর্বির কারণে বিভিন্ন বিপাকীয় সমস্যাগুলি অনুভব করে কিন্তু, তাদের লিভারের স্থায়ী কোন ক্ষতি সাধন হয় না।
কিন্তু,২৫-৩০% রোগীর ক্ষেত্রে, ফ্যাটি লিভার আরও গুরুতর অবস্থার দিকে অগ্রসর হয়। তখন, একে নন-অ্যালকোহলিক স্টেটোহেপাটাইটিস (NASH) বলা হয়। NASH এর ক্ষেত্রে লিভারের কোষগুলি অতিরিক্ত চর্বির কারণে ফুলে যায় এবং ছিঁড়ে যায়। লিভার যখন এই ক্ষতিগ্রস্থ কোষগুলিকে মেরামত করার চেষ্টা করে, তখন স্কার টিস্যু তৈরি হয়। এই অবস্থাটিকে ফাইব্রোসিস বলা হয়।
এই NASH কেসগুলির প্রায় ২০% ক্ষেত্রে এটি লিভার সিরোসিসের দিকে মোড় নেয় অর্থাৎ ১০০ জন NASH রোগীর মধ্যে ২০ জনের লিভার সিরোসিস হয়। আর লিভার সিরোসিস হল একটি অনিরাময়যোগ্য অবস্থা যা একটি পর্যায়ে লিভার ফেইলিউর ঘটায়।
আবার, যাদের ক্ষেত্রে রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে তারাও আসলে খুব একটা নিরাপদ নয়। দেখা যায়, নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার আছে এমন মানুষদের হৃদরোগ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি।
সমস্যা হচ্ছে, অনেক এনএএফএলডি রোগী বুঝতেই পারেন না যে, তাদের এটি আছে। কারণ, প্রাথমিক পর্যায়ে এর তেমন কোন উপসর্গ থাকে না। রোগটি যখন অনেকটা জটিল হয়ে যায়, তখন রোগীর পেট ফুলে যাওয়া, ক্ষুধা কমে যাওয়া এবং জন্ডিসের মতো লক্ষণগুলি প্রকাশ পায়।