বুক জ্বালা, গ্যাস, পেট ফাঁপা, এসিডিটি এই কথাগুলোর সাথে আমরা সবাই পরিচিত এবং প্রায় সবাইকেই কম-বেশি এসব যন্ত্রণা পোহাতে হয়। এই সমস্যাগুলো কেন হয় তা আমরা সবাই জানি (অতিরিক্ত স্টমাক এসিড (হাইড্রোক্লোরিক এসিড) থেকে। আর এর প্রতিকার করতেও আমরা সিদ্ধহস্ত (এসিডকে নিউট্রালাইজড করতে পারে এমন ওষুধ, যাকে আমরা অ্যান্টাসিড বলি, মুঠে মুঠে সেবন করা)।
বাজারে বেশির ভাগ অ্যান্টাসিডই অ্যালুমিনিয়াম ও ম্যাগনিজিয়াম হাইড্রোক্সাইড, যা স্টমাক এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে মূলত অ্যালুমিনিয়াম ও পানি বা ম্যাগনিজিয়াম ও পানি উৎপাদন করে। তবে কোনো কোনো অ্যান্টাসিডে সোডিয়াম বাই-কার্বনেট বা বেকিং সোডা ও ক্যালসিয়াম কার্বনেট থাকে, যারা স্টমাক এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে কার্বন-ডাইঅক্সাইড তৈরি করে আর সেই সাথে “ম্যাগনিজিয়াম এবং ক্যালসিয়ামও পাওয়া যায়। অর্থাৎ এরা সবাই এসিডকে ধ্বংস করে।
কিন্তু আমরা কি জানি যে গ্যাস বা পেট ফাঁপা শুধু অতিরিক্ত এসিড নিঃসরণ নয়, বরং কম এসিড নিঃসরণ থেকেও হতে পারে? প্রয়োজনীয় পরিমাণ এসিডের অভাবে পাকস্থলীর খাবারগুলো বিশেষ করে প্রোটিন ঠিকমতো হজম না হয়েই বৃহদন্ত্রে প্রবেশ করে, যেখানে হাজারো ব্যাকটেরিয়া এগুলো মজা করে খায় আর গ্যাসীয় উপাদান তৈরি করে, যা আমরা পরে টের পাই বিভিন্ন উপসর্গ থেকে।
পর্যাপ্ত পরিমাণ এসিডের অভাবে আমাদের খাবারগুলো আমরা ভালোভাবে হজম করতে পারি না বলে সেখান থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান শোষণে ব্যর্থ হই এবং খাবারের সাথে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে ব্যর্থ হই, যা পরবর্তীতে দেহাভ্যন্তরে প্রবেশ করে বিভিন্ন ধরনের রোগের সূত্রপাত ঘটায়। এসিড-স্বল্পতা বা হাইপোক্লোরাইডিয়ার কারণে ঘটা বিভিন্ন সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রদাহ, পাকস্থলীতে ব্যথা, খাবার পর বমি-বমি ভাব, গেঁটেবাত, ক্ষুদ্রান্ত্রে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি, অমø ঢেক, বুকজ্বালা, অপুষ্টি, ছিদ্রযুক্ত অন্ত্র, ত্বকের সমস্যা ইত্যাদি।
বিভিন্ন কারণে এসিড-স্বল্পতা হতে পারে, তবে সবচেয়ে বেশি হয় স্ট্রেস ও অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের কারণে। অন্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে খাবার না চিবিয়ে দ্রুত খেয়ে ফেলা, খুব বেশি চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া, পুরোনো কোনো ব্যাধি, কোনো বিশেষ খাবারে সংবেদনশীলতা বা অ্যালার্জি, কোনো ওষুধের প্রতিক্রিয়া বা বয়স বৃদ্ধি প্রভৃতি।
এখন, আমরা যদি এসিড-স্বল্পতায় ভুগি আর না বুঝে এসিড বেড়ে গেছে মনে করে এসিড কমানোর বিভিন্ন ওষুধ খাই তাহলে সমস্যা না কমে বরং আরো বাড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নাই। তাই আমাদের প্রথমত বুঝতে হবে যে আমাদের যে বুকজ্বালা করছে তা এসিড বেশির কারণে নাকি এসিড কমের কারণে। আর নিশ্চিত হওয়ার পর কেবল আমাদের ওষুধ খাওয়া উচিত। তার আগে কোনোভাবেই নয়।
এসিড কম না বেশি তা জানতে আমরা চিকিৎসকের সাহায্য নিতে পারি। তবে আমাদের গ্যাস এসিড বৃদ্ধি না কমার কারণে হচ্ছে তা বোঝার কতগুলো ঘরোয়া উপায়ও আছে। যার মধ্যে সবচেয়ে সহজ হলো বেকিং সোডা চ্যালেঞ্জ।
এক চামচের চার ভাগের এক ভাগ বেকিং সোডা নিন এবং এক গ্লাস পানিতে ভালো করে মিশিয়ে নিন। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এটি পান করুন। এই বেকিং সোডা পাকস্থলীর এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে কার্বন-ডাইঅক্সাইড তৈরি করবে, যা একটি বায়বীয় পদার্থ আর যা সাধারণত পায়ুপথে নিষ্কাশিত হয়। এখন পান করার সাথে সাথে যদি আপনি বায়ু নিষ্কাশন অনুভব করেন তাহলে বুঝতে হবে আপনার এসিডের স্বল্পতা নেই। যদি ৫ মিনিট পর বায়ু নিষ্কাশন অনুভব করেন তাহলে আপনার এসিডের স্বল্পতা আছে। আর যদি আপনি মোটেও কিছু অনুভব না করেন তাহলে আপনার খুব দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে ও এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে।