মেটাবলিক সিনড্রোম হল মানুষের শরীরে একগুচ্ছ অস্বাভাবিক অবস্থার সংমিশ্রন যাদের উপস্থিতির ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস বা কার্ডিওভাসকুলার রোগ যেমন হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক এর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। একে সিন্ড্রোম এক্স বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স সিনড্রোমও বলা হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই অস্বাভাবিক অবস্থাগুলো কোনগুলো। মোট পাঁচটি অবস্থা রয়েছে যার যেকোন তিনটি যদি কোন ব্যক্তির মধ্যে উপস্থিত থাকে তবে বলা যেতে পারে তার মেটাবলিক সিনড্রোম রয়েছে। অবস্থা পাঁচটি নিম্নরূপ:
• পুরুষদের জন্য কোমর ৪০ (বাংলাদেশীদের জন্য ৩৫) ইঞ্চি বা তার বেশি হলে, এবং মহিলাদের ৩৫ (বাংলাদেশীদের জন্য ৩২) ইঞ্চি বা তার বেশি হলে;
• সিস্টোলিক রক্তচাপ ১৩০ mmHg এর উপরে এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৮৫ mmHg এর উপরে হলে, অথবা একজন রোগী যদি নিয়মিত রক্তচাপ কমানোর ওষুধ গ্রহণ করেন;
• খালিপেটে রক্তে শর্করার মাত্রা ১০০ mg/dl এর উপরে বা রোগী যদি গ্লুকোজ কমানোর ওষুধ খান;
• রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা ১৫০ mg/dl এর বেশি হলে;
• এইচডিএল এর মাত্রা পুরুষের রক্তে ৪০ mg/dl এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ৫০ mg/dl-এর কম হলে।
যে বিষয়গুলো শরীরে মেটাবলিক সিন্ড্রোম দেখা দেয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় তাদের মধ্যে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হল যখন শরীরের কোষগুলি ইনসুলিনের প্রতি ভালোভাবে সাড়া দেয় না এবং তাই গ্লুকোজ ব্যবহার করতে পারে না; গ্লুকোজ রক্তে থাকে, যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বংশগত কারণে হতে পারে বা অনিয়মিত জীবনশৈলীর কারণেও হতে পারে।
অন্যান্য বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে পেটের স্থূলতা, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, বার্ধক্য, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং কিছু বিশেষ ওষুধের ব্যবহার। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মেটাবলিক সিনড্রোম বেশি দেখা দেয়। কিছু জাতিগত গোষ্ঠী অন্যদের তুলনায় বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। যেমন, ভারতীয় উপমহাদেশীয়দের মধ্যে বেশি দেখা যায়। মেটাবলিক সিনড্রোম প্রায়ই অত্যধিক রক্ত জমাট বাঁধা এবং দীর্ঘস্থায়ী কম মাত্রার ইনফ্লামেশন, সেইসাথে অন্যান্য বেশ কয়েকটি অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, কিন্তু এগুলোর কারণে মেটাবলিক সিনড্রোম হয় নাকি মেটাবলিক সিনড্রোমের কারণে এগুলো হয় তা স্পষ্ট নয়।
হৃদরোগ, রক্তনালীর রোগ এবং স্ট্রোক এর ঝুঁকি কমাতে মেটাবলিক সিনড্রোমের চিকিৎসা জরুরী। চিকিৎসার লক্ষ্য থাকে রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল কমানো; ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখা বা এটি প্রতিরোধ করা এবং শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলা। এর জন্য প্রয়োজন হয় হার্ট এর জন্য ক্ষতিকর খাবারগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া ও উপকারী খাবার খাওয়া, শারীরিক কার্যকলাপ পর্যাপ্ত করা, ওজন স্বাভাবিক রাখা, মানসিক চাপকে সঠিকভাবে সামলানো, এবং ধূমপান ছেড়ে দেয়া। যদি জীবনযাত্রার পরিবর্তন আনার পরও মেটাবলিক সিনড্রোম চলে না যায় তাহলে রক্তচাপ, এলডিএল কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কমানোর জন্য, রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে বা রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করতে ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হতে পারে।