ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রায় ৫০ শতাংশ লোকের এক ধরণের বিশেষ ত্বকের সমস্যা দেখা যায় যাকে ডায়াবেটিক ডার্মোপ্যাথি বলা হয়ে থাকে। এর কারণে ত্বকে লালচে বা বাদামী বর্ণের গোলাকার বা ডিম্বাকৃতির ছোট ক্ষত সৃষ্টি হয়।
ক্ষতগুলি শরীরের যে কোনও জায়গায় হতে পারে, তবে হাড়বহুল অংশে বেশি বিকশিত হতে দেখা যায়। শিন বা জংঘার সামনের দিকে এর বিস্তৃতি বেশি হয় বলে একে কখনও কখনও শিন স্পট বা পিগমেন্টেড প্রটিবিয়াল প্যাচ হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
কারণসমূহ
ডায়াবেটিক ডার্মোপ্যাথির সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে দীর্ঘস্থায়ীদিন ধরে ডায়াবেটিসে ভোগার ফলে ত্বকের রক্তনালী এবং কানেকটিভ টিস্যুর যে পরিবর্তন হয় তার সাথে ডায়াবেটিক ডার্মোপ্যাথির সম্পর্ক আছে বলে মনে করা হয়। যেমন:
মাইক্রোএনজিওপ্যাথি: অতিরিক্ত সুগার ত্বকের ছোট রক্তনালীগুলির ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে ত্বকে রক্ত প্রবাহ এবং অক্সিজেনেশনের ব্যাঘাত ঘটে।
কোলাজেন পরিবর্তন: কোলাজেন একটি প্রাকৃতিক প্রোটিন যা শরীর নিজেই তৈরী করতে পারে। শরীরের হাড়, পেশি, অস্থিসন্ধি, চুল, নখ ও ত্বকের গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে এটি। ডায়াবেটিস ত্বকে কোলাজেন এর উৎপাদন ও ব্যবহারকে বাঁধা দেয় যার ফলে ত্বকের ক্ষত সহজেই সৃষ্টি হয় এবং বৃদ্ধি পায়।
অ্যাডভান্সড গ্লাইকেশন এন্ড-প্রোডাক্টস (AGEs): রক্তে অতিরিক্ত সুগার ত্বকের প্রোটিনের সাথে বিক্রিয়া করে AGEs সৃষ্টি করে যা ত্বকে জমা হয়ে ত্বকের গঠন এবং কার্যকারিতায় পরিবর্তন আনে, যা পরবর্তীতে ডায়াবেটিক ডার্মোপ্যাথিতে অবদান রাখে।
লক্ষণ
ডায়াবেটিক ডার্মোপ্যাথির বাহ্যিক রূপ ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিতে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
এর ফলে ত্বকে লালচে-বাদামী, গোলাকার বা ডিম্বাকৃতি ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায় যার আয়তন সাধারণত কয়েক মিলিমিটার থেকে কয়েক সেন্টিমিটার ব্যাস পর্যন্ত হতে পারে।
ক্ষতগুলি প্রাথমিকভাবে শিন বা জংঘার উপরিভাবে সৃষ্টি হলেও পরবর্তীতে শরীরের অন্যান্য অংশ যেমন উরু, হাত, বুক, পিঠেও দেখা যায়।
দাগগুলি সাধারনত দ্বিপাক্ষিকভাবে সৃষ্টি হয়, যার অর্থ তারা উভয় পায়ে বা উভয় বাহুতে দেখা দেয়।
ক্ষতগুলি দেখতে ভয়ংকর হলেও ডায়াবেটিক ডার্মোপ্যাথি সাধারণত জ্বালাপোড়া, দংশন বা চুলকানির মতো উপসর্গ সৃষ্টি করে না।
ত্বকের ক্ষত ছাড়া ডায়াবেটিক ডার্মোপ্যাথির অন্য কোনো উপসর্গ নেই। এই ক্ষত বা প্যাচগুলি গলে যায় না বা তরল নির্গত করে না। তারা সংক্রামকও নয়।
কিছু ক্ষেত্রে, ক্ষতগুলি ভালো হতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে বা একেবারেই ভালো নাও হতে পারে।
এখানে লক্ষণীয় যে, এই ক্ষতগুলির উপস্থিতি ডায়াবেটিক ডার্মোপ্যাথির ক্ষেত্রে শুধু নয় বরং অন্যান্য অবস্থার কারণেও হতে পারে। অতএব, ত্বকে কোন ধরণের ক্ষত বা দাগ দেখা গেলে সঠিক রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা জরুরী।
রোগ নির্ণয়
সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য ডাক্তার ত্বকের বায়োপসি করতে পারেন। ডায়াবেটিক ডার্মোপ্যাথি অনেকসময় ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। ডায়াবেটিসের অন্যান্য সাধারণ লক্ষণ এর মধ্যে রয়েছে: ঘনঘন মূত্রত্যাগ, ঘন ঘন তৃষ্ণা, ক্লান্তি, ঝাপসা দৃষ্টি, ওজন কমা ইত্যাদি।
চিকিৎসা
ডায়াবেটিক ডার্মোপ্যাথির কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখাটাই এক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরী।
কিছু ক্ষত দু এক মাসের মধ্যে ভালো হতে পারে, কিছু আবার এক বছরেরও বেশি সময় নিতে পারে। কিছু ক্ষত আবার স্থায়ী হতে পারে।
আমাদের জানা জরুরী যে ডায়াবেটিক ডার্মোপ্যাথি ছোঁয়াচে নয় এবং এটি সরাসরি কোনওস্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে না। বরং এর উপস্থিতি আমাদের জানায় যে রক্তে সুগার সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়নি। রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ এবং ত্বকের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ডায়াবেটিক ডার্মোপ্যাথি প্রতিরোধ বা হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে।
মনে রাখতে হবে ডায়াবেটিসের অন্যান্য জটিলতা যেমন নার্ভের ক্ষতি, স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করার জন্য ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণ স্বরূপ, আপনি যদি নির্ধারিত ওষুধ সেবন করেন, কিন্তু তারপরও আপনার রক্তে শর্করা বেশি থাকে, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। আপনার বর্তমান ব্যবস্থাপত্র সামঞ্জস্য করতে হতে পারে।