পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের, যেকোনো সংস্কৃতির, যেকোনো বয়সের পর্যাপ্ত শারীরিক কর্মকা- করেন এমন মানুষগুলোকে পর্যবেক্ষণ করা হলে দেখা যাবে এরা অন্যদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত সুখী, স্বাস্থ্যবান, অর্থপূর্ণ জীবনযাপন করেন, অবসাদে কম ভোগেন এবং এদের পরিবার ও বন্ধুদের সাথে উত্তম পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রাখতে সমর্থ হন। যখন আমরা হাঁটা-চলাফেরা করি তখন এটি আমাদের শরীরকে একটি অনন্য অবস্থায় নিয়ে যায়। গবেষণা বলছে, যারা শারীরিক কসরত করেন তাদের মস্তিষ্ক এবং নার্ভাস সিস্টেম অন্যদের থেকে ভিন্ন হয়। এদের সুখানুভূতি ভালো এবং এরা অন্যদের তুলনায় বেশি মানসিক চাপ নিতে সক্ষম।
আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন, যারা ভাবেন শারীরিকভাবে ফিট হওয়ার জন্য জিমে যাওয়া প্রয়োজন। কেউ বা আবার ঘরে ট্রেডমিল বা সাইক্লিং মেশিন নেই বলে ব্যায়াম করতে পারেন না। অনেকে এত ব্যস্ত থাকেন যে, ব্যায়াম করার জন্য একটু সময় বের করতে পারেন না। কিন্তু আমরা যদি শুধু এটুকু বুঝি যে, শারীরিকভাবে ব্যস্ত থাকতে পারলেই তা আমাদের ব্যায়ামের কাজ করবে তাহলে আমাদের জিম, যন্ত্র বা বাড়তি সময় কোনো কিছুরই প্রয়োজন পড়বে না।
সুস্থ থাকার জন্য জিমে যাওয়া জরুরি নয়। পৃথিবীর সুস্থ ও দীর্ঘায়ুদের যদি আমলে নেই তবে দেখা দেখা যাবে তাদের কেউ জিমে যেতেন না। শতবর্ষ পূর্ণ করেছেন এমন মানুষগুলো কেমন পরিবেশে থাকেন ও কেমন জীবনযাপন করেন তা খুঁজে দেখতে ন্যাশন্যাল জিওগ্রাফি থেকে একটি দল পৃথিবীজুড়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং এদের পর্যবেক্ষণ করেছেন। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শতবর্ষী মানুষ তারা পেয়েছেন ইতালির সার্ডিনিয়া, জাপানের ওকিনাওয়া, কোস্টারিকার নিকোয়া, গ্রিসের ইকারিয়া এবং ক্যালিফোর্নিয়ার লোমা লিন্ডাতে। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু বৈশিষ্ট্যের সাথে সাথে প্রত্যেকের জন্য যা একই রকম ছিল তা হলো এদের জীবনে যন্ত্রের অপ্রতুলতা ছিল অর্থাৎ শহুরে জীবনের আরাম-আয়াশ খুব একটা ছিল না। বরং এরা প্রত্যেকে শারীরিক কর্মকা-ে লিপ্ত ছিলেন। তবে তারা কেউই ভারোত্তোলন করেননি, ম্যারাথন করেননি এবং জিমের সদস্য ছিলেন না।
বরং তারা প্রাকৃতিক পরিবেশে জীবন-ঘনিষ্ঠ কাজগুলো করতে ঘাম ঝরাতেন, যেমনÑদৈনিক হেঁটে হেঁটে হাটবাজারসহ প্রয়োজনীয় কাজগুলো করা, বাগান করা এবং শারীরিক শ্রম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা ইত্যাদি। কিন্তু যাদের কথা বলছি তারা তো ১০০ বছর আগের পৃথিবীতে এসেছিলেন যখন শতকরা মাত্র ১০ ভাগ কাজ ছিল বসে থেকে করার কাজ আর আজকের পৃথিবীতে তো শতকরা ৯০ ভাগ কাজই বসে থেকে করতে হয়, অর্থাৎ শারীরিক পরিশ্রমের অবকাশ খুবই কম। আমরা চাইলেও সেই পৃথিবীতে ফিরে যেতে পারি না। তবে আন্তরিকভাবে চাইলে আমরা আজকের পৃথিবীতেও কিছু শারীরিক কাজ করার মতো সুযোগ তৈরি করে নিতে পারি। যেমনÑহেঁটে বা সাইকেলে করে অফিস করা, বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া, শপিংয়ে যাওয়া, রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া, এমনকি ঘরের কাজগুলো নিজের হাতে করা। ইন্টারনেট সার্ফিং বাদ দিয়ে এসব কাজে সময় নষ্ট করাকে বোকামি মনে হতে পারে বা বোরিংও মনে হতে পারে, তবে যদি এইভাবে ভাবা যায় যে, “এই কাজগুলো আমাদের সুস্থ ও দীর্ঘায়ুর সাথে সম্পর্কিত”, তবে এটি উপভোগ্যই হবে।
গবেষণা বলছে যে, প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট করে হাঁটা উচিত আর এর সাথে যদি অন্য কোনো শারীরিক কসরত যোগ করা যায় তবে তা হবে বোনাস। আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির গবেষণায় দেখা যায়, সপ্তাহে ৬ ঘণ্টা করে হাঁটলে হৃদরোগ, শ্বাসনালির রোগ ও ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। আর একদম না হাঁটার থেকে সপ্তাহে অন্তত ২ ঘণ্টা করে হাঁটলেও তা এসব রোগ থেকে মৃত্যুঝুঁকি কমায়। হাঁটা শুধু শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও খুব জরুরি একটি জিনিস। ক্যারোলিন্সকা ইনস্টিটিউটের প্রফেসর এন্ডারস হ্যানসনের মতে প্রাত্যহিক হাঁটা স্মৃতিভ্রংশ-এর হার ৪০% কমিয়ে দেয়।
যদি কোনোভাবেই হাঁটার জন্য সময় বের করা না যায় তবে অন্তত ৫ মিনিট করে হলেও হাঁটা উচিত, যা আমরা চাইলেই করতে পারি। অফিসের ডেস্ক থেকে দাঁড়িয়ে একটু আশপাশে হেঁটে আসা খুব কঠিন না। আমাদের আসলে বাঁচতে হলে হাঁটতে হবে। কারণ আমাদের শরীরের গঠনটাই এমন যে আমাদের হাঁটা-চলাফেরা করতে হবে। না করলে এখানে গোলযোগ তৈরি হওয়াটা সময়ের বিষয় মাত্র হয়ে দাঁড়াবে। অনেক ভারী ওজন বহন বা হাই ইনটেসিটির শারীরিক কসরত অপেক্ষা একটু মুক্ত বাতাসে হাঁটা অনেক বেশি কার্যকর।
Subscribe to Updates
Get the latest creative news from FooBar about art, design and business.
What's Hot
শারীরিক পরিশ্রম দরকার, জিম নয়
3 Mins Read0 Views
Previous Articleজিন ও খাদ্যোপাদানের মিথস্ক্রিয়া
Next Article বুক জ্বালা-এসিড কম নাকি বেশি?
Related Posts
Add A Comment