যদি আপনি এমন কোন সমস্যায় ভোগেন যা প্রকারান্তরে আপনার শরীরে অক্সিজেনের অভাব তৈরী করে তবে আপনার জেনে রাখা ভালো যে এ থেকে কোন বিপদ ঘটতে পারে কিনা। পারে! আজকে সে আলোচনাই করব।
অক্সিজেন যে জীবনের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান তা বলার প্রয়োজন নেই। অক্সিজেনের অভাব মাত্র ৪-৬ মিনিট সময়ে আমাদের মৃত্যু ডেকে আনে। শরীরের বৃদ্ধি, প্রজনন এবং খাদ্য থেকে শক্তি উৎপাদন সব কিছুর জন্য আমাদের শরীরের অক্সিজেন প্রয়োজন ।
যখন আপনার শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকে না, তখন আপনার রক্তে এবং অন্যান্য কোষে অক্সিজেনের মাত্রা অতিমাত্রায় কমে যায়। এদের হাইপোক্সেমিয়া (আপনার রক্তে কম অক্সিজেন) এবং হাইপোক্সিয়া (আপনার টিস্যুতে কম অক্সিজেন) বলে। এই অবস্থাগুলো ভীষণ বিপজ্জনক । হাইপোক্সেমিয়া বা হাইপোক্সিয়া এর লক্ষণগুলি শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই আপনার মস্তিষ্ক, লিভার, কিডনী এবং অন্যান্য কোষকলা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যেতে পারে।
লক্ষণ
যদিও ব্যক্তিভেদে হাইপোক্সিয়ার লক্ষণগুলোর সামান্য পরিবর্তন হতে পারে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যায়।
• ত্বকের রঙ নীলচে বা লালচে হয়ে যাওয়া
• বিভ্রান্তি
• কাশি
• দ্রুত হার্ট রেট
• দ্রুত শ্বাস – প্রশ্বাস
• নিঃশ্বাসের দুর্বলতা
• ধীর হার্ট রেট
• ঘাম
• শ্বাস-প্রশ্বাসে সাঁ সাঁ শব্দ হওয়া
আপনার যদি হাইপোক্সিয়ার লক্ষণ গুলো থেকে থাকে তবে খুব দ্রুত ডাক্তারের সেবা নেয়া জরুরী। তবে, কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা অনেক কমে যাওয়ার পরও হাইপোক্সিয়ার কোন লক্ষণ নেই। একে সাইলেন্ট (নিরব) হাইপোক্সিয়া বা হ্যাপি হাইপোক্সিয়া বলে। সেক্ষেত্রে বাসায় পালস অক্সিমিটার দিয়ে অক্সিজেনের মাত্রার উপর নজর রাখা জরুরী। সাধারনত: অক্সিমিটারে ৯৪ শতাংশের নিচে রিডিং দেখালে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হয় তবে কিছু হাঁপানি ও সিওপিডি এর রোগীর শরীরে স্বাভাবিক অবস্থাতেই ৯৪ থাকে। তাদের ক্ষেত্রে ৯০ এর নিচে নেমে গেলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
চিকিৎসা
হাইপোক্সিয়ার চিকিৎসার জন্য এবং আপনার শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক রাখতে আপনাকে হাসপাতালে যেতে হবে।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আপনার শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ানো। এটি আপনার নাকে একটি ছোট প্লাগের মাধ্যমে বা আপনার নাক এবং মুখ ঢেকে থাকা একটি মাস্কের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, এটিই অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক করার জন্য যথেষ্ট। অনেক সময় শোয়ার ধরণে পরিবর্তন এনেও অক্সিজেনের মাত্রা কিছুটা বাড়ানো যায়।
মুখ দিয়ে ইনহেলার বা হাঁপানির ওষুধ শ্বাস-প্রশ্বাসকে সহজ করে তুলতে পারে। যদি এগুলি সাহায্য না করে, ডাক্তার আপনার হাতের শিরা দিয়ে আপনাকে ওষুধ দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। আপনার ফুসফুসে প্রদাহ কমানোর জন্য অল্প সময়ের জন্য স্টেরয়েড ওষুধ বা অন্তর্নিহিত সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে।
আপনার পরিস্থিতি যদি এতটাই ভয়াবহ হয় যে, কোন চিকিৎসা কাজ করছে না, তখন আপনাকে শ্বাস নিতে সাহায্য করার জন্য একটি মেশিনের প্রয়োজন হতে পারে।
হাইপোক্সিয়ার কারণ
• হাঁপানির আক্রমণ একটি প্রধান কারণ। এ সময় আপনার শ্বাসনালী সরু হয়ে ফুসফুসে বাতাসের প্রবেশ কঠিন হয়ে পরে। আপনার ফুসফুস পরিষ্কার করতে কাশি হয় আর তাতে আরও বেশি অক্সিজেন খরচ হয়ে যায়।
• কোন আঘাত থেকে ফুসফুসের ক্ষতির ফলেও হাইপোক্সিয়া হতে পারে।
• ফুসফুসের রোগ যেমন ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি), এমফিসিমা, ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া এবং ফুসফুসের পানি জমা।
• শক্তিশালী ব্যথার ওষুধ এবং নেশাদ্রব্য প্রাণঘাতী শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে।
• হার্টের কোন সমস্যা
• অ্যানিমিয়া (অক্সিজেন বহনকারী লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা কমে যাওয়া)
• সায়ানাইড বিষক্রিয়া (সায়ানাইড একটি রাসায়নিক যা প্লাস্টিক এবং অন্যান্য পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।)
হাইপোক্সিয়া প্রতিরোধ
• হাইপোক্সিয়া প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় হল আপনার হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রাখা, প্রতিদিন। পরিকল্পিতভাবে হাঁপানির চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া।
• সঠিক খাওয়া এবং সক্রিয় থাকা।
• কোন বিষয়গুলো হাঁপানির আক্রমন বাড়ায় সেগুলি এড়ানো ৷
• ডাক্তারের সাথে অগ্রিম কথা বলে নেয়া যাতে আপনি জানেন যে আপনার শ্বাস নিতে সমস্যা হলে কী করতে হবে।
• হার্ট ডিজিজ বা এনিমিয়া থাকলে তার চিকিৎসা করা।