সিঁড়ি বেয়ে উঠতে বা নামতে কি আপনার হাঁটুতে ব্যাথা হয়? কিংবা মাজার পেছন দিকটাতে ব্যাথা? কিংবা পায়ের নিচের অংশে ব্যাথা? এই উপসর্গগুলো মূলত সায়াটিকা এর উপসর্গ। সায়াটিক নার্ভ কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলে এমন ধরণের লক্ষণ দেখা যায়। আপনি সায়াটিকার চিকিৎসা নিলেন এবং কিছুদিন ভালো থাকলেন। তারপর আবার শুরু হল সেই একই সমস্যা। বাধ্য হয়ে ডাক্তার আপনাকে পেইন কিলার এবং চরম পর্যায়ে স্টেরয়েড ইনজেকশন দিলেন। আপনি আবার কিছুদিন ভালো থাকলেন কিন্তু পুরোপুরি মু্ক্তি পেলেন না।
আসলে ঠিক যে কারণে সায়াটিক নার্ভ ঠিকমত কাজ করতে পারছে না তাকে চিহ্নিত করা না গেলে এখান থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব না। বিভিন্ন কারণে সায়াটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। তবে, ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড কে সায়াটিকার কারণ হিসেবে খুব কমই আমলে নেয়া হয়। ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড (লিওমায়োমাস নামেও পরিচিত) হল জরায়ুর মসৃণ পেশীর এক ধরণের টিউমার যা খুব কমই ক্যান্সারে পরিণত হয় (0.1%)। আর যেহেতু বেশিরভাগ ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড জটিলতা সৃস্টি করে না এবং কোন উপসর্গ দেখায় না তাই এটি নিযে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীগণ খুব বেশি বিচলিত হন না।
ধারণা করা হয় যে শতকরা ৮০ ভাগ মহিলার তাদের সন্তান জন্মদানের বয়সে (আনুমানিক ১৪-৫০বছর) ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড হয়। তবে, বেশিরভাগ ফাইব্রয়েড কোনো উপসর্গ সৃষ্টি করে না এবং এগুলোর কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। এগুলি সাধারণত ছোট ফাইব্রয়েড। অনেকে জানেনও না যে তাদের ফাইব্রয়েড আছে।
আপনার যদি হাঁটুর ব্যাথা থাকে তবে আপনার জন্য জেনে নেয়া ভালো যে ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড কি এবং কেমন ধরণের উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। এতে করে আপনি আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীকে রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করতে পারবেন।
ফাইব্রয়েড বোঝার জন্য আগে জরায়ুর গঠন বোঝাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জরায়ু-গহ্বর (মায়ের পেটের যে স্থানে একটি ভ্রুন পূর্ণাঙ্গ মানব শিশুতে পরিণত হয়) বহুস্তরবিশিষ্ট জরায়ু প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত। পেরিমেট্রিয়াম হল বাইরের আবরণ, এন্ডোমেট্রিয়াম হল অভ্যন্তরীণ স্তর যা মাসিক চক্রের সময় পড়ে যায়। মায়োমেট্রিয়াম হল মসৃণ পেশী টিস্যু দ্বারা গঠিত মাঝের স্তর, যেখানে ফাইব্রয়েডগুলি প্রায়শই তৈরি হয়।
এই ফইব্রয়েডগুলোর আকার এবং অবস্থান বিভিন্ন হতে পারে। কিছু ফাইব্রয়েড খুব ছোট হতে পারে, এমনকি মানুষের চোখেও যা ধরা পড়ে না। বড় ফাইব্রয়েডগুলি আবার এত বড় হতে পারে যে তারা জরায়ুর আকৃতিকে পর্যন্ত বিকৃত করতে পারে বা এটিকে প্রসারিত করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে ফাইব্রয়েড এত বড় হতে পারে যে এটি পাঁজরের খাঁচায় চাপ সৃষ্টি করে।
ফাইব্রয়েড এর উৎপত্তিস্থল এবং আকারের উপর নির্ভর করে এটি কেমন ধরণের উপসর্গ বা জটিলতা দেখাবে। ফাইব্রয়েডে আক্রান্ত হলে একজন মহিলার তিনটি প্রধান উপসর্গ দেখা যায়। একটি হল মাসিকের সময় ভারী রক্তপাত। মহিলাদের ভারী মাসিক হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যে কারণটি থাকে তা হল ফাইব্রয়েড।
দ্বিতীয়টি হল পেলভিসে ব্যথা বা চাপ। পেলভিস হল পেটের নীচে শরীরের অংশ যা নিতম্বের হাড়ের মধ্যে অবস্থিত এবং যেখানে মূত্রাশয় ও মলদ্বার (রেকটাম) অবস্থিত। মহিলাদের ক্ষেত্রে, এতে যোনি, সারভিক্স, জরায়ু, ফ্যালোপিয়ান টিউব এবং ডিম্বাশয়ও থাকে। ফাইব্রয়েডগুলি প্রায়শই পাথরের মতো শক্ত এবং দৃঢ় হয় এবং বড় ফাইব্রয়েডের অনেক ওজন হয়। তারা পেলভিক স্নায়ুর উপর চাপ দেয় যাতে পেলভিসে এবং পিঠের নিচের দিকে এবং নিতম্বে ব্যথা হয়। এটি সায়াটিকার মতোই পায়ের নিচের দিকে চলে যেতে পারে এবং হাঁটু বা নিচের হাড়ে ব্যাথা সৃষ্টি করতে পারে। অনেকসময়ই একে মেরুদন্ডের ডিস্কের সমস্যা বলে ভুল করা হয।
অপর উপসর্গটি হল ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া। ফাইব্রয়েড মূত্রাশয়ের ওপরে পেপারওয়েটের মতো চাপ দিতে পারে। এতে মূত্রাশয় সংকুচিত হয়ে যায় এবং তার ধারণক্ষমতা অনুযায়ী মুত্র ধারণ করতে পারে না। তারা ঘন ঘন প্রস্রাব করে এবং রাতে ঘনঘন ঘুম ভেঙ্গে যায়। এছাড়া অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে আছে কোষ্ঠকাঠিন্য, মলদ্বারে কোলনের অংশ দৃশ্যমান হওয়া, বেদনাদায়ক সহবাস।
আপনার যদি উপরের লক্ষণগুলো থেকে থাকে তবে আজই আপনার ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড আছে কিনা নিশ্চিত হতে সচেষ্ট হোন। নিজের জন্য সময় বের করুন। আপনার স্বাস্থ্যের জন্য সময় বরাদ্দ করুন। এবং সর্বোপরি আপনার শরীরের কথা শুনুন। আপনার শরীর আপনাকে তার ভাষায় অনেক কিছু বলছে। আপনার দায়িত্ব সে ভাষা বুঝে সঠিক কাজটি করা।