বেশ কিছু বিষয় আছে যা NAFLD সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:
অতিরিক্ত ক্যাররি গ্রহণ: প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ক্যালোরি খাওয়ার ফলে লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমে যেতে পারে – এবং খাবার যে ধরণেরই হোক না কেন, যদি তা দৈহিক চাহিদার বেশি ক্যালোরি সরবরাহ করে তবে সে খাবার থেকে ফ্যাটি লিভার ঘটতে পারে।
রিফাইনড বা অতিপরিশ্রুত কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ: সাদা ভাত, আটা-ময়দা দিয়ে তৈরী যেকোন খাবার গুলো হল রিফাইনড কার্বোহাইড্রেট। শরীর যে পরিমান কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ ও ধারণ করতে সক্ষম তার চেয়ে বেশি রিফাইনড কার্বোহাইড্রেট খেলে শরীর তাকে চর্বি হিসেবে জমা করে রাখে। কার্বোহাইড্রেট থেকে চর্বি তৈরীর এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ডি নভো লিপোজেনেসিস (আক্ষরিক অর্থ “নতুন চর্বি তৈরি করা”)। এ প্রক্রিয়ার উৎপাদিত চর্বি লিভার সঞ্চয় করে পরবর্তী সময়ে ব্যবহারের জন্য। যখন কার্বোহাইড্রেট এবং ক্যালোরি উভয়ই বেশি হয়ে যায় তখন শরীর এই কাজটি করে।
একটি গবেষণায় দেখা যায়, অতিরিক্ত ওজনের প্রাপ্তবয়স্করা যখন দৈনিক প্রয়োজনের থেকে ১০০০ ক্যালোরি বেশি কার্বোহাইড্রেট খান, তখন মাত্র তিন সপ্তাহে তাদের লিভারের চর্বি ২৭% বৃদ্ধি পায়।
অত্যধিক চিনি গ্রহণ: চিনি একটি রিফাইনড কার্বোহাইড্রেট হলেও এটি অন্যান্য রিফাইনড কার্বোহাইড্রেট অপেক্ষা ক্ষতিকর। চিনিতে প্রচুর পরিমাণে ফ্রুক্টোজ থাকে। দেখা গেছে যারা প্রচুর পরিমাণে চিনি বা চিনি দিয়ে তৈরী খাবার খান তাদের লিভারে দ্রুত চর্বি জমে। কিছু গবেষক বিশ্বাস করেন অতি ফ্রুক্টোজ গ্রহণ লিভারে ফ্যাট জমার একটি অন্যতম প্রাধান কারণ।
স্যাচুরেটেড ফ্যাট: বেশকিছু গবেষণায় উঠে আসে যে অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট খাওয়ার ফলেও ফ্যাটি লিভার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। স্যাচুরেটেড ফ্যাট হল সেই সমস্ত চর্বি যা সাধারণত ঘরের তাপমাত্রায় জমাট বাধাঁ থাকে। মাখন, পাম এবং নারকেল তেল, পনির এবং লাল মাংসের মতো খাবারে উচ্চ পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। কিন্তু, এক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন আছে, যে গবেষণা গুলো ফ্যাটি লিভারের অবদানকারী হিসাবে স্যাচুরেটেড ফ্যাটকে দায়ী করে, সেখানে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এর সাথে অত্যাধিক কার্বোহাইড্রেট এবং অতিক্যালোরিযুক্ত ডায়েট কে আমলে নেয়া হয়নি।
সাম্প্রতিক বেশ কিছু গবেষণাতে দেখা যায়, ব্যক্তি যখন ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে কম কার্ব খান তখন এটি তার ফ্যাটি লিভার সারতে সাহায্য করে, এমনকি যারা এসময় যথেষ্ট পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট খান তাদের ক্ষেত্রেও ফলাফল একই থাকে। অতএব, স্যাচুরেটেড ফ্যাট নাকি অধিক ক্যালরীযুক্ত খাবার ফ্যাটি লিভার সৃষ্টি করছে তা নিয়ে আলোচনার অবকাশ আছে।
শারীরীক পরিশ্রমবিহীন জীবন: পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় দেখা যায় যে নড়াচড়া করার পরিবর্তে বসে বেশি সময় ব্যয় করা ব্যক্তিদের লিভারে অতিরিক্ত চর্বি সঞ্চয় এর হার বেশি।
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: ফ্যাটি লিভার সৃষ্টির জন্য যে ওষুধগুলি সাধারণত জড়িত তার মধ্যে রয়েছে কর্টিকোস্টেরয়েডস, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট এবং অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি ট্যামোক্সিফেন। অনেক ক্ষেত্রে, এটা স্পষ্ট নয় যে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ লিভারে ওষুধের সরাসরি ফলাফল নাকি ওষুধের ফলে ওজন বৃদ্ধির কারণে সৃষ্টি হয় যেমন, অনেক অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট বা অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ সেবনের ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়।
তবে, এমন প্রচুর উদাহরণ আছে যারা প্রচুর রিফাইনড কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করেন এবং খুব সামান্য ব্যায়াম করেন কিন্তু তাদের এনএএফএলডি হয়নি। তাহলে কাদের ক্ষেত্রে আসলে এটি বেশি হয়? এখানে বেশ কিছু বিষয় আছে NAFLD বিকাশের সম্ভাবনা বাড়ায়। যেমন:
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স: ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স সম্পর্কিত অসুখ যেমন টাইপ 2 ডায়াবেটিস এবং মেটাবলিক সিন্ড্রোম আছে এমন মানুষদের এনএএফএলডি-এর ঝুঁকি বেশি। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং রক্তে অতি মাত্রার ইনসুলিন লিভারের চর্বি জমাকে ত্বরান্বিত করে।
প্রসস্ত কোমর: শরীরের মাঝখানের চারপাশে অত্যধিক ওজন বহন করা উচ্চ ইনসুলিনের মাত্রার সাথে খুব দৃঢ়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। BMI “স্বাভাবিক” থাকলেও, কোমরের মাপ বেশি হলে এনএএফএলডি-এর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় ।
জেনেটিক্স: কিছু লোকের এনএএফএলডি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি কারণ তারা উত্তরাধিকারসূত্রে কিছু জিনের বৈচিত্র্য পেয়েছে যা তাদের রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। যাইহোক, এই বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন রয়েছে।