প্যারাসিটামলের প্রধান ব্যবহার হল ব্যথা উপশম এবং জ্বর কমানো। শিশুদের ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহৃত হয় এবং প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ওষুদের দোকান থেকে কেনা যায়।
বাংলাদেশে, প্যারাসিটামলের কিছু ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে নাপা, এইস। তবে, ব্রান্ড নাম যাই হোক না কেন জেনেরিক নাম সবসময় একই। আমাদের দেশে আমরা প্যারাসিটামল। বাহিরের দেশে একে এসিটামিনোফেনও বলা হয়।
কখনও কখনও বাবা মা ধরেই নেন যে জ্বর হলে সন্তানকে অবশ্যই ওষুধ দিতে হবে যা সত্য না। শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া সবসময় খারাপ কিছু নয়। কারণ এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধের একটি অংশ। ধরুন, আপনার শরীরে যদি ইনফ্লুয়েন্জা বা করোনা ভাইরাস প্রবেশ করে তবে শরীর একে ধ্বংশ করার জন্য অনেক কিছুই করবে। সেই অনেক কিছুর মধ্যে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করা শরীরের একটি কৌশল।
সব জ্বরে ওষুধের প্রয়োজন হয় না। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে বা আপনার সন্তান যদি অস্বস্তির অভিযোগ করে শুধু তখন জ্বরের চিকিৎসা করতে হবে। যদি তারা অভিযোগ না করে তবে তাদের হাসি-খুশি রাখা এবং খেলনা বা তাদের পছন্দের জিনিস নিয়ে ব্যস্ত রাখাটাই সর্বোত্তম পন্থা। সেইসাথে এটি যাতে খুব বেশি বেড়ে না যায় তা নিশ্চিত করতে বারবার তাদের তাপমাত্রা মেপে দেখা জরুরী।
যাইহোক, এটি উপলব্ধি করা জরুরী যে যদিও প্যারাসিটামল গ্রহণের ফলে মানুষ ভাল বোধ করতে পারে, তাই বলে এটি যে কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে তাকে সারাতে পারে না।
এখন,প্যারাসিটামল যদি ব্যবহার করা হয় তবে এর ডোজ বা মাত্রা ঠিক রাখাটা জরুরী। মাত্রা সঠিক না হলে ওষুধে ভালো কাজ হয় না বা ডোজের আধিক্যের ফলে বিপজ্জনক অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে।
একটি শিশুর জন্য প্যারাসিটামলের সঠিক ডোজ তাদের ওজনের উপর নির্ভর করে, বয়সের উপর না।
ডোজ গণনা
শিশুর প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১০-১৫ মিলিগ্রাম প্যারাসিটামল দেয়া হয়। অন্য কথায়, যদি একটি শিশুর ওজন ২০ কেজি হয় তবে তাকে ১০-১৫mg x ২০ বা ২০০-৩০০mg প্যারাসিটামল দিতে হবে। এই ডোজটি প্রতি ৪ থেকে ৬ ঘন্টায় একবার নেওয়া যেতে পারে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৪ -৬ বার পর্যন্ত প্যারাসিটামল নেয়া যেতে পারে ।
সাধারনত বাচ্চাদের প্যারাসিটামল ওষুধের প্যাকেটের গায়ে ওষুধের সঠিক ডোজ সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশনা থাকে। সবসময় সুপারিশ করা হয় সর্বনিম্ন ডোজ ব্যবহার করার জন্য। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া আপনার সুপারিশকৃত ডোজ অতিক্রম করা উচিত নয়।
কোনো শিশুর একদিনে তাদের শরীরের ওজনের প্রতি কেজির জন্য ৬০mg এর বেশি গ্রহণ করা উচিত না। অর্থাৎ প্রতিবার প্রতি কেজির জন্য ১৫mgএর বেশি গ্রহণ করা উচিত না। শিশুর ওজন অনুযায়ী প্যাকেট বা বোতলে লেখা ডোজটি লক্ষ করতে হবে।
প্যারাসিটামলি সিরাপ এর ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে।মনে রাখবেন যে ‘mg’ হল ওজনের একটি পরিমাপ এবং ‘mL’ হল তরল আয়তনের একটি পরিমাপ। এসময় প্যাকেটের গায়ের নির্দেশাবলী অনুসরণ করা অত্যাবশ্যক কারণ সব ব্র্যান্ডের শক্তি একই না। প্যারাসিটামল বিভিন্ন বয়সের জন্য বিভিন্ন শক্তিতেও পাওয়া যায়। বোতলের ডোজ নির্দেশাবলী পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে প্রতি mL বা মিলিলিটার ওষুধে কত mg বা মিলিগ্রাম প্যারাসিটামল আছে।
শিশুকে প্যারাসিটামল দেয়ার পূর্বে নিশ্চিত হতে হবে যে ইতিপূর্বে যে ওষুধ দেয়া হয়েছে তাতে প্যারাসিটামল নেই। এতে ওভারডোজ হবার সম্ভাবনা থাকবে না। মনে রাখতে হবে প্যারাসিটামল কার্যকর হতে ৬০ মিনিট পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
এখন, আপনি যদি শিশুর ওজন না জানেন তাহলে কি করবেন? অনেকসময় প্যাকেজিং এ বয়সের উপর ভিত্তি করে ডোজ দেয়া থাকে – উদাহরণস্বরূপ, ৫-৬ বছর (১৮-২০ কেজি)। এসময় খেয়াল করতে হবে যে আপনার শিশু যদি তার বয়সের তুলনায় ছোট বা গড় থেকে হালকা হয়,তবে ডোজটি কম বয়সের উপর ভিত্তি করে দিতে হবে।
যদিও সঠিক মাত্রায় প্যারাসিটামল একটি অত্যন্ত নিরাপদ ওষুধ, তবে খুব বেশি গ্রহণ করা হলে এটি বিপজ্জনক হতে পারে। অতিরিক্ত মাত্রায় প্যারাসিটামল লিভারের ক্ষতি, লিভার ফেইলিওর এবং কিডনির ক্ষতি করতে পারে এবং এমনকি প্রাণঘাতীও হতে পারে।
যদি আপনার সন্দেহ হয় যে আপনার শিশু ঘটনাক্রমে খুব বেশি প্যারাসিটামল গ্রহণ করেছে, তাহলে আপনার সরাসরি চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া উচিত।