বিশেষ বিশেষ জিনের উপস্থিতি মানুষের শরীরে বিশেষ বিশেষ রোগ যেমনÑ স্থূলতা, টাইপ-২ ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমার রোগসংশ্লিষ্ট জিনগুলো আছে বলে আমি যেভাবেই চলি না কেন রোগগুলো হবেই। জিন একা কিছু করতে পারে না। তার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ ওই রোগগুলোর ঝুঁকি বৃদ্ধিকারী জিনগুলো যদি উপযুক্ত পরিবেশ না পায় তবে কাজ করতে পারে না।
দেখা যায় যে, আমাদের স্বাস্থ্যের ৯০ শতাংশই নিয়ন্ত্রিত হয় পরিবেশ দ্বারা। যা আমরা খাই, যতটুকু শারীরিক পরিশ্রম করি, যেভাবে মানসিক চাপকে মোকাবেলা করি এবং যতটা টক্সিক উপাদানের কাছাকাছি আসি, তার সবই আমাদের জিনের জন্য পরিবেশ। এই পরিবেশের কারণেই আমাদের কলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে, রক্তচাপ বাড়ে এবং হৃদরোগ হয়। তাই স্রষ্টার কাছ থেকে খারাপ জিন পেয়েছি, এখন আর কিছুই করার নাই, এমন ভাবাটা ভুল ভাবা হবে।
এ প্রসঙ্গে নিউট্রিজেনোমিক্সের উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। জিনের কার্যক্রমের ওপর খাদ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন উপাদান বা বায়োঅ্যাকটিভ মলিকিউলের প্রভাব সম্পর্কিত আলোচনাই নিউট্রিজিনোমিক্স। এ ক্ষেত্রে যা ঘটে তা হলো, খাদ্যের মধ্যে বেশ কিছু উপাদান আছে, যা একপর্যায়ে দেহকোষে পৌঁছে কোষের বিভিন্ন সিগন্যালিং মলিকিউলের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে, যে সিগন্যালিং মলিকিউলগুলো কিনা কোষের বিভিন্ন কার্যক্রমের সুইচ হিসেবে কাজ করে। একটি স্বাস্থ্যকর খাবার এমন কিছু বায়োঅ্যাকটিভ মলিকিউল সরবরাহ করতে পারে, যা কোষকে সুরক্ষা প্রদানকারী কার্যক্রমের সুইচ অন করতে পারে। আর এইটা তখনই সম্ভব হয় যখন সুরক্ষা প্রদানকারী কার্যক্রমের জন্য যে প্রোটিন প্রয়োজন সেই প্রোটিনের ডিএনএ কোডকে অ্যাক্টিভেট করার জন্য কোষের নিউক্লিয়াসে সিগন্যাল যায়। অপরপক্ষে, স্বাস্থ্যকর নয় এরূপ খাবার এমন কিছু মলিকিউল সরবরাহ করতে পারে, যা কোষের বিশেষ ধরনের কিছু সিগন্যালিং মলিকিউলকে অ্যাক্টিভেট করে, যার বিপরীত ধরনের প্রভাব থাকে। অর্থাৎ এগুলো এমন কিছু জিনকে অ্যাক্টিভেট করে, যা কোষের জন্য ক্ষতিকর প্রোটিন তৈরি করতে পারে, যেমনÑইনফ্লামেটরি বা প্রদাহ সৃষ্টিকারী প্রোটিন।
অর্থাৎ বিষয়টি এমন দাঁড়াল যে, বংশগতভাবে আমরা বিভিন্ন ক্রনিক ও ডিজেনারেটিভ (যেমনÑক্যানসার, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, ওবেসিটি, অ্যালঝাইমার ইত্যাদি) রোগপ্রবণ হওয়া সত্ত্বেও সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন করে এসব রোগের জন্য দায়ী জিনের প্রকাশকে বাধা প্রদানের মাধ্যমে এই রোগগুলোকে প্রকাশ হওয়া থেকে বিরত রাখতে পারি। উদাহরণস্বরূপ ফাইটোকেমিক্যাল সালফোরাফেনের কথা বলা যেতে পারে, যা ক্রুসিফেরাস জাতীয় সবজি, যেমনÑফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি প্রভৃতিতে পাওয়া যায়। এই কেমিক্যালটি ক্যানসার সৃষ্টিকারী ডিএনএ সেগমেন্টের সাথে সংযুক্ত প্রোটিনে পরিবর্তন এনে ওই ডিএনএকে কাজ করতে বাধা প্রদান করে।
আমরা এমন একটি সময়ে প্রবেশ করছি, যখন আমাদের পরিবেশ কীভাবে আমাদের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে সেই রহস্য ধীরে ধীরে আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে এবং ঠিক কী কারণে আমাদের খাবার এবং দৈনন্দিন অভ্যাসগুলো ভালো বা খারাপ বলে বিবেচিত হয়, তা সবিস্তারে জানতে পারছি বিভিন্ন গবেষণা থেকে, যা এতদিন পর্যন্ত আমাদের কাছে অস্পষ্টই ছিল।
Subscribe to Updates
Get the latest creative news from FooBar about art, design and business.
What's Hot
জিন ও খাদ্যোপাদানের মিথস্ক্রিয়া
2 Mins Read0 Views
Previous Articleঝেড়ে ফেলি বাড়তি ওজন
Next Article শারীরিক পরিশ্রম দরকার, জিম নয়
Related Posts
Add A Comment