কোমা কি?
কি কারণে কোমা ঘটে?
কোমার কার্যকর চিকিৎসা আছে কি?
কোমা কি?
কোমা হল একটি দীর্ঘ গভীর অচেতন অবস্থা। কোমায় থাকা ব্যক্তি বেঁচে থাকেন কিন্তু তারা তাদের আশেপাশের পরিবেশের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানাতে অক্ষম অর্থাৎ তারা শব্দ বা ব্যথায় সাড়া দেন না। তারা স্বেচ্ছায় যোগাযোগ করতে বা নড়াচড়া করতে পারেন না। কাশি ও ঢোক গিলার মতো কাজগুলোও একেবারে কমে যায়। তাদের দেখে মনে হয় ঘুমিয়ে আছেন কিন্তু তাদের জাগানো যায় না। অনেকে শ্বাস নিতে পারেন, অনেকের আবার শ্বাস নিতে সাহায্য করার জন্য একটি মেশিনের প্রয়োজন হয়। কেউ কেউ মাঝে মাঝে চিৎকার করতে পারেন, কাঁদতে পারেন বা হাসতে পারেন।
সময়ের সাথে সাথে, ব্যক্তি ধীরে ধীরে চেতনা ফিরে পেতে পারেন। কোমা খুব কমই দুই থেকে চার সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়। কিছু লোক এর মধ্যেই জেগে উঠেন, অন্যরা আবার ভেজিটেটিভ স্টেইট বা মিনিমালি কনশাস স্টেইটে চলে যেতে পারেন।
কি কারণে কোমা ঘটে?
কোমা মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে হয়। রক্তচাপ বৃদ্ধি, অক্সিজেন হ্রাস বা বিষাক্ত পদার্থ জমা হওয়ার কারণে মস্তিষ্ক আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে। মস্তিষ্কের জখমটি অস্থায়ী এবং নিরাময়যোগ্য হতে পারে। আবার,এটি স্থায়ীও হতে পারে। ৫০% এর বেশি কোমা মাথার আঘাত বা মস্তিষ্কের রক্তচলাচলের ব্যাঘাতের সাথে সম্পর্কিত। কোমা হতে পারে এমন আঘাতগুলো হলঃ
• আঘাত : সড়ক দুর্ঘটনা, খেলাধুলা বা হিংসাত্মক আক্রমণ প্রভৃতি কারণে মাথায় আঘাত লাগতে পারে যা থেকে কোমা হতে পারে।
• অক্সিজেনের অভাব: মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য অক্সিজেন অপরিহার্য। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ফলে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ এবং অক্সিজেন হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়, যাকে বলা হয় হাইপোক্সিয়া বা অ্যানোক্সিয়া। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা প্রায়ই কোমায় থাকে। স্ট্রোক, ডুবে যাওয়া বা শ্বাসরোধ থেকেও মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব ঘটতে পারে।
• রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা : ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কখনও কখনও খুব বেশি হতে পারে অথবা খুব কমে যেতে পারে, যা যথাক্রমে হাইপারগ্লাইসেমিয়া এবং হাইপোগ্লাইসেমিয়া নামে পরিচিত। যদি এই অবস্থাগুলির যে কোন একটি খুব বেশি সময় ধরে চলতে থাকে তবে ব্যক্তি কোমায় চলে যেতে পারে।
• সংক্রমণ: কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সংক্রমণ, যেমন এনসেফালাইটিস, বা মস্তিষ্কের চারপাশের টিস্যুগুলির সংক্রমণ, যেমন মেনিনজাইটিস, থেকে কোমা হতে পারে।
• টক্সিন: সাধারণত শরীরে পাওয়া যায় এমন পদার্থগুলি বিষাক্ত মাত্রায় জমা হতে পারে যদি শরীর তাদের সঠিকভাবে নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, লিভারের রোগের কারণে অ্যামোনিয়া, মারাত্মক হাঁপানির আক্রমণ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড বা কিডনি ফেইলিউরের কারণে ইউরিয়া শরীরে বিষাক্ত মাত্রায় জমা হতে পারে। প্রচুর পরিমাণে ড্রাগ এবং অ্যালকোহলও মস্তিষ্কে নিউরনের কার্যকারিতা ব্যাহত করতে পারে এবং কোমা সৃষ্টি হতে পারে।
• রক্তপাত: মস্তিষ্কের বিভিন্ন স্তরে রক্তক্ষরণের ফলে কোমা হতে পারে। রক্তক্ষরণের স্থানে জমা হওয়া তরল ব্রেইন স্টেমের উপর অবস্থিত রেটিকুলার অ্যাক্টিভেটিং সিস্টেম-এর উপর চাপ দিতে পারে ও এর ক্ষতি করতে পারে। রেটিকুলার অ্যাক্টিভেটিং সিস্টেম হল আমাদের ব্রেনস্টেমের উপর স্নায়ুর একটি বান্ডিল যা উত্তেজনা এবং সচেতনতার জন্য দায়ী। উচ্চ রক্তচাপ, ফেটে যাওয়া সেরিব্রাল অ্যানিউরিজম এবং টিউমার মস্তিষ্কে রক্তপাতের কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ।
কোমার কার্যকর চিকিৎসা আছে কি?
কোমার চিকিৎসা নির্ভর করে কোমার কারণের উপর। উদাহরণস্বরূপ, যদি মস্তিষ্ককে কোনও সংক্রমণ হয়, তাহলে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে। ডায়াবেটিক শক হলে গ্লুকোজ প্রয়োজন হতে পারে। ফুলে যাওয়া বা টিউমার এর কারণে সৃষ্ট মস্তিষ্কের চাপ কমাতেও অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। কিছু ওষুধ ফোলা উপশম করতে সাহায্য করতে পারে যেমন ম্যানিটল এবং হাইপারটোনিক স্যালাইন । এক্ষেত্রে রোগীর কাছের লোকদের ডাক্তারদের যতটা সম্ভব তথ্য দেওয়া উচিত যাতে ডাক্তারদের কোমার কারণ নির্ধারণ করতে পারেন। সাধারনত: কোমায় থাকা ব্যক্তিদের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আই সি ইউ) থাকার প্রয়োজন হয় এবং তাদের অবস্থার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত প্রায়ই লাইফ সাপোর্ট এর প্রয়োজন হয়।